পেট্রোবাংলা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৪: সুযোগ সুবিধা যেমন


পেট্রোবাংলা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৪: সুযোগ সুবিধা যেমন

পেট্রোবাংলা নিয়ে লেখাটার শুরু করার আগেই একটা জরূরী পয়েন্ট জেনে নিন, বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি) এবং তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি পেট্রোবাংলার আওতাধীন কোম্পানী। বাপেক্সের কিংবা তিতাসের আন্ডারে পেট্রোবাংলা না। পেট্রোবাংলা প্যারেন্ট প্রতিষ্ঠান। এদের (বাপেক্স,তিতাস) আওতাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নাই।এই একটা ভুল অনেকেই করে। 

যাইহোক, বাংলাদেশ অয়েল গ্যাস এন্ড মিনারেল কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) বাংলাদেশের খুব লাক্সারিয়াস জবগুলার একটা।


লাইফ লাক্সারিয়াস এর আরেকটা কারন, নিজস্ব যাতায়াত ফ্যাসিলিটিজ! কোয়ার্টার ফ্যাসিলিটিজ (সব প্রতিষ্ঠানের জন্য না, ঢাকাতে পাবেন না) বিদেশে ট্রেইনিং, প্রচুর বিদেশীদের সাথে মিটিং যা মোটমুটি সব গুলায় লাক্সারিয়াস হোটেলে হয়, যেহেতু বিদেশীরা সেইগুলাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। 



পেট্রোবাংলা বাংলাদেশ বিদ্যুত জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন কর্পোরেশন। পেট্রোবাংলার আরেকটা ভাই আছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ওয়েল কোম্পানী, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিঃ এলপি গ্যাস লিঃ ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস লিঃ, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক ওয়েল লিঃ, মোট ৭ টি কোম্পানী। এরা শুধু মাত্র ফিনিশড প্রডাক্ট নিয়ে কাজ করে, কোনো র' প্রডাক্ট উৎপন্ন করে না।


পেট্রোবাংলার অধিনে আছে ১৩ টা প্রতিষ্ঠান। যারা প্রত্যেকে স্বতন্ত্র। 

১. বাপেক্স (হেড অফিস-ঢাকা) ২,বিজিএফসিএল (বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড-বিবাড়িয়া) ৩. এসজিএফএল (সিলেট গ্যাস ফিল্ড,সিলেট) 

দেশীয় এই তিনটা প্রতিষ্ঠানে থেকে একমাত্র গ্যাস উৎপন্ন হয়। বাকিটা শেভরন বাংলাদেশের, বিবিয়ানা ফিল্ড। এদের উৎপন্ন গ্যাস সরাসরি ন্যাশনাল গ্রিডি যোগ হয়। (উল্লেখ্য যে ২-৩ নাম্বার প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করলে আপনাকে আপনার পুরা চাকুরী জীবন যথাক্রমে বিবাড়িয়া এবং সিলেটের দুর্গম অঞ্চলে থাকতে হবে)

এই গ্যাসটা যেই লাইনগুলা মাধ্যমে ট্র‍্যান্সফার হয়ে থাকে, সেই লাইনের মালিক কোম্পানীর নাম ৪.জিটিসিএল (গ্যাস ট্র‍্যান্সমিশন কোম্পানী-আগারগাও,ঢাকা) 

এই ট্র‍্যানমিশন হওয়া গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন এর জন্য আছেঃ- ৫ তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে ডিস্ট্রিবিউট- হেড অফিস কারওয়ান বাজার, ঢাকা)  ৬. বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (কুমিল্লার, বিবাড়িয়া, নোয়াখালী, চাদপুর এই রিজিয়ন , হেড অফিস কুমিল্লা) ৭. জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (বৃহত্তর সিলেট, হেড অফিস সিলেট), ৮ কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (কেজিডিসিএল,বৃহত্তর চট্টগ্রাম, হেড অফিস চট্টগ্রাম)। ৯.পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন (পিজিসিএল, উত্তর বঙের কিছু এলাকা, হেড অফিস সিরাজগঞ্জ) এবং ১০. সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি (এসজিসিএল,খুলনা অঞ্চল- হেড অফিস খুলনা) 


১-৩ নং প্রতিষ্ঠান গ্যাস সাধারণ জনগনের কাছে বিক্রি করে না। তারা সরাসরি ন্যাশনাল গ্রিডে দেয়। বিক্রির কাজ করে ৫-১০ নং প্রতিষ্ঠান। 

এছাড়া, পেট্রোবাংলার নিজস্ব আরো তিন টা কোম্পানী আছে, ১১. রুপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (আরপিজিসিএল, হেড অফিস, খিলক্ষেত-ঢাকা) ১২. বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং (বিসিএমসিএল-দিনাজপুর হেড অফিস) এবং ১৩. মধ্যপাড়া কঠিন শিলা (এমজিসিএল- এইটাও দিনাজপুর) 

পেট্রোবাংলা নিজে কর্রপোশেন, অর্থাৎ সে সরকারী- আধা সরকারী থেকে স্বায়ত্বশাসনের মাঝে কোথাও এক জায়গাতে পরে।  বেতন ভাতা রাজস্ব খাত, এই রাজস্ব খাত মানে সরকারী রাজস্ব না। এইটা পেট্রোবাংলার নিজস্ব রাজস্ব। ঠিক বিদ্যুত খাতের মত।

পেট্রোবাংলার ১৩ টা কোম্পানী চলে নিজস্ব অর্থে। অর্থাৎ বেতন ভাতা কোম্পানির। পেট্রবাংলা নিজেসহ অধিকাংশ কোম্পানীতে পেনসন সুবিধা আছে। বেতন নবম গ্রেডের ক্ষেত্রে শুরু ২২০০০ টাকার স্কেল অনুযায়ী। কেউ কেউ, ২০১৫ সালের বর্ধিত গেজেট অনুযায়ী ২৩,১০০ টাকা দিয়ে শুরু করেন। এইটা কোম্পানীর নিজস্ব ব্যাপার। সাথে এলাকা ভেদে ৪০-৫৫ শতাংশ বাসা ভাড়া। মেডিক্যাল ভাতা ১৫০০ টাকা অথবা ওষুধ সুবিধা। যে কোনো একটা।  কোনো কোনো কোম্পানী তার ইম্পলোয়িদের দুইটা সুবিধায় দিয়ে থাকে। আরো টুকটাক মিলিয়ে আরো হাজার খানেক টাকা মুল বেতনের সাথে যাবে।

বেতন ভাতা সবগুলা কোম্পানির কাছাকাছি! যেহেতু সে কোম্পানী এবং লাভ-ক্ষতির সাথে সম্পর্ক আছে, তাই কোম্পানী থেকে কোম্পানী কিছু ব্যাপারে পার্থক্য থেকে যায়। তবে সব কোম্পানিই তার নিজের ইম্পলোয়িদের কিছু সুযোগ সুবিধা দেয়। যেহেতু সে এই ব্যাপারটাতে কোম্পানিগুলো  স্বতন্ত্র। তাই এইটাই একটা ব্যাপারেই পেট্রোবাংলার সাথে কোম্পানিগুলোর পার্থক্য। কিন্তু পেট্রোবাংলা পেট্রোবাংলাই।


পেট্রোবাংলার অধিকাংশ কোম্পানীতেই প্রমোশন স্কিমটা বেশ স্মুথ। বেশ সহজেই ম্যানেজার, অর্থাৎ চতুর্থ গ্রেড অবধি আরামে উঠতে পারবেন। বয়স কমে জয়েন করলে এমডি অর্থাৎ দ্বিতীয় গ্রেডেও যেতে পারবেন। বলে রাখি, গেজেটেড চাকুরী বাদে, বাকি সব ক্ষেত্রে গ্রেডটা শুধু মাত্র বেতন ভাতার বর্ধিঞ্চু আর কোম্পানির ইন্টারনাল চেইন অফ কমান্ডের জন্যেই ব্যাবহার হয়! 


কর্পোরেশন এবং কোম্পানিগুলাতে, নবম গ্রেডের অফিসারের পদের নাম সহকারী ব্যবস্থাপক AM। এর পর উপ-ব্যাবস্থাপক DM, ব্যাবস্থাপক M, উপ-মহাব্যবস্থাপক DGM, মহা ব্যবস্থাপক GM, এবং সব শেষে ম্যানেজিং ডিরেক্টার MD৷ ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠানে পদের নাম সহকারী ইঞ্জিনিয়ার দিয়েও শুরু হয়। AM, AD, SO আসলে সব সমান। তবে বিভিন্ন কারনে AD পদটা বাকি দুইটার থেকে বাংলাসহ কোম্পানীগুলার নিজস্ব কর্মকর্তারা সরকারী জব ক্যাটাগরীর একদম প্রান্তীয় শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তা। মানে সরকারি না ধরলেও কিছু যাবে আসবেও না। আমাদের ব্যাংকগুলাও অনেকটা তাই।বিদ্যুৎ বিভাগ ও তেমনই। তাই বুক ফুলিয়ে সরকারী কর্মকর্তা লেখা লিঃ কোম্পানীর কর্মকর্তাদের সাজে না। তবে হ্যা, প্রতিষ্ঠান সরকারের, রাস্ট্রর। কিন্তু কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের। এই হিসাবে অনেকে নিজেকে সরকারী দাবি করেন বলেই, প্রান্তিক বলা হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। 


এখন এই জব ক্যানো  করবেন না? 


বেতন ভাতা গেজেটেড অফিসার এর থেকে কখনো বেশীই হয়। কারন কোম্পানি আইন আলাদা। সব সময় তারা সরকারী বেতন রুলস ফলো করতে বাধ্য না। পাওয়ার বা ক্ষমতা নাই। শুন্য। তবে ৫-১০ নাম্বার, অর্থাৎ ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তারা কিছু পাওয়ার হোল্ড করতে পারেন, কারন তাদের পাবলিক ডিলিংস আছে। আসলে পাওয়ার ব্যাপারটা পাবলিক ডিলিংস এর সাথে। যে যত পাবলিকের ব্যাপার দেখবে তার পাওয়ার তত।

পেট্রোবাংলার জব লুক্রেটিভ, ল্যাক্সারিয়াস, কেনো সেইটা আগেই বলেছি। ইনফ্যাক্ট আমার চোখে বেশ হাইলি রেটেড। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। 


তবে হ্যা, অনেকের মনেই সংকোচ থাকতে পারে রাজস্ব খাত কি না এই নিয়ে! আমি বলি, এইসব ভাবার দরকার নাই। জব আগে পান। আমাকে সুযোগ সুবিধা বদলি এইসব নিয়েও অনেকে প্রশ্ন করেছেন, এইগুলাও ভাই এত্ত ভাইবেন না।  প্রথম শ্রেনীর জব, ২২০০০ দিয়ে শুরু, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।



Post a Comment (0)
Previous Post Next Post